শুকনো ফলের মধ্যে সবথেকে উপভোগ্য, আনন্দদায়ক এবং জনপ্রিয় হল কিশমিশ। কিশমিশের আকর্ষন, মিষ্টি স্বাদ সহ পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উপকারিতার জন্যই সাধারণত এটাকে বয়স নির্বিশেষে সবাইকে খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।
কিশমিশ ডিহাইড্রেটেড আঙুর হলেও এর ভেতরের পুষ্টি উপাদান আরও বেশী কেন্দ্রিভুত হয়ে যায়। পরিমিত পরিমাণে কিশমিশ খাওয়া আসলে স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। কিশমিশের মধ্যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় ধরনের ডায়াটারি ফাইবার এবং পলিফেনল, ক্যাথেচিন, ইসোফ্ল্যাবোনেসের মতন স্বাস্থ্য প্রতিরক্ষামূলক ফাইটোকেমিকাল থাকে, যা এনার্জির মাত্রা বাড়াতে, অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ সহ হৃৎপিণ্ডের জন্যও উপকারী। কিশমিশের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রিবায়োটিক (যেমন ফ্রুকটেন, ইনসুলিন) থাকে, যা কোলনের মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাড়িয়ে সার্বিকভাবে হজমের উন্নতির পাশাপাশি কিশমিশের কম থেকে মাঝারি গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের (কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কিভাবে বাড়ায় তার মাপকাঠি) কারণে এটা ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ করে। কিশমিশের ভেতরের অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (যেমন আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বি-ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি) পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, যা একাধারে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা (অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য)সহ ফ্লুয়িডের ভারসাম্য ও বেশী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত করে এবং হাড়ের গঠন ও নতুন রক্তকোষ ইত্যাদি তৈরি করতে সাহায্য করে।
কিশমিশ সহ বেশ কিছু খাবারের পরামর্শ দেওয়া হল যা সারাদিনে অন্ততপক্ষে একবার খেলেও উপকার পাওয়া যায়-
জলে ভেজানো কিশমিশঃ
সারাদিনের জ্বালানির জোগান দেবার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দের শুকনো ফল হল কিশমিশ, যা শরীরের কর্মক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। সুতরাং জলে ভেজানো কিশমিশ দিয়ে শুরু করাটা সব সময়ে উপকারি। রাতে জলের মধ্যে আধমুঠো কিশমিশ ভিজিয়ে রেখে পরেরদিন সকালে খাওয়া দরকার। এই খাবারে মজুত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি রাডিক্যেল সাফ করে দেয় বা তাদের বেড়ে ওঠা আটকে দিয়ে কাজের সময় সচল, কর্মক্ষম এবং সতেজ রাখে।
হালুয়ার সাথে কিশমিশঃ
খাদ্যতালিকার অন্তর্গত কিশমিশ সুস্থ-কর্মক্ষম থাকবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দেয়। প্রাতরাশ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের এক চতুর্থাংশ পাওয়া দরকার এবং যার মধ্যে সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার দরকার (বিশেষকরে প্রোটিন, ফাইবার এবং ফ্যাটের সাথে কার্বোহাইড্রেট)। প্রাতরাশে ১০টা থেকে ১২টার মতন কিশমিশ অন্যান্য খাবার যেমন হালুয়া (ওট বা সুজির হালুয়া), গমের ফ্লেক্স বা কর্নফ্লেস্ক বা স্কিমড মিল্কের সাথে মুসিল, ভেজ উপমা ইত্যাদি খেলে অনেক বেশী পরিমাণে ক্যালোরি, ডায়াটারি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলের সঙ্গে দিনের শুরুতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি পাওয়া যায়।
বাদাম-কিশমিশের স্যালাডঃ
প্রাতরাশ ও লাঞ্চের মাঝে কাজের মধ্যে কেউ যদি কিছু চিবিয়ে খেতে চান তাহলে কিশমিশ হল সবথেকে উপযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর উপায়। কিশমিশের ভেতরে যেহেতু অত্যাবশ্যকীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (আয়রন, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম) থাকে তাই এটা শরীরের অ্যাসিডিটিকে প্রশমিত করে দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। অর্ধেক বাটি কিশমিশ ও বাদামের (কাজুবাদাম, আখরোট) স্যালাড ক্ষুধা মেটাবার জন্য উপযুক্ত।
পোলাওয়ের মধ্যে কিশমিশঃ
কিশমিশ বিভিন্ন ধরনের খাবারে ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে ব্রাউন রাইস পোলাও অন্যতম। ডায়াটারি ফাইবারের সাথে কার্বোহাইড্রেট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (ভিটামিন ও মিনারেল) লাঞ্চে খাবার জন্য উপযুক্ত এবং আরও বেশী উপাদেয় ও স্বাস্থ্যকর বানানোর জন্য এর মধ্যে বিভিন্ন সবজি দেওয়া যেতে পারে।
সবজি সেদ্ধ করে তার মধ্যে কিশমিশঃ
প্রত্যেকে সুস্থ-সবল এবং কর্মক্ষম থাকবার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়া পছন্দ করেন। সেদ্ধ সবজির সাথে কিশমিশ গুঁড়ো কিন্তু লাঞ্চে খাবার জন্য যথার্থ উপাদেয় খাবার, কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান মজুত থাকে। এটা প্রধানত ভাত, পরোটা, রুটির সাথে খাওয়া যেতে পারে।
ফল-দই-কিশমিশের চাটঃ
দইয়ের সাথে ফল মিশিয়ে তার মধ্যে কিশমিশ ছড়িয়ে দিলে সেটা স্বাভাবিকভাবে প্রোটিন, ফাইবার এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের উৎস, যা দুপুরবেলা কিংবা সন্ধ্যাবেলায় স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায়।
কিশমিশ দিয়ে পুডিং বা কাস্টার্ডঃ
কিশমিশ যে কোন ধরনের মিষ্টির গন্ধ বাড়াতে পারে, তাই মিষ্টি খাবার ইচ্ছেও পূরণ করতে পারে। পুডিং বা কাস্টার্ডের ওপরে সামান্য পরিমাণ কিশমিশ ছড়িয়ে দিলে সেটা একদিকে যেমন অপুর্ব স্বাদ ও গন্ধ বাড়াবে ঠিক তেমনই কিশমিশ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ভাণ্ডার। কিশমিশের সুন্দর মিষ্টি স্বাদ ডেসার্ট হিসেবে পুডিং এবং কাস্টার্ডে একটা অসাধারণ মাত্রা যোগ করে।
– অরুণাভ মৈত্র
More Stories
শিরোনাম: ফেলাইন ফ্রেন্ড থেকে কফি কননোইজার পর্যন্ত: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ব্রু উন্মোচন করা
16 Valuable Benefits Of Apple Cider Vinegar ।।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের ১৬ রকম মূল্যবান ব্যবহার ।।
What is Amazon Affiliate Marketing ?