দোষ করলে শাস্তি পেতেই হবে এটাই নিয়ম।কিন্তু বিনা দোষে কোনো গাছকে শাস্তি পেতে দেখেছেন? হ্যাঁ আপনি ঠিকই শুনছেন! একটি বটগাছ কে শাস্তি পেতে হয়েছিল বিনা কারণে….
উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের এই বটগাছ ওই অঞ্চলের অত্যাচারী উপনিবেশিক আমলে ” গ্রেপ্তার” হয় এক ব্রিটিশ সেনা অফিসারের দ্বারা। এই আশ্চর্যজনক গ্রেপ্তারটি 1898 সালে তুরখান সীমান্তবর্তী ল্যান্ডি কোটলে ব্রিটিশ অফিসার জেমস স্কুইড দ্বারা করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
লন্ডি কোটালের খোগিখিল উপজাতির 60 বছর বয়সী প্রধান ইসলাম খান শিনওয়ারী বলেন- “আমার দাদা ফতেহ খান শিনওয়ারি আমাকে বলেছিলেন যে ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা জেমস একজন নির্মম লোক ছিলেন, যিনি এই বটগাছটিকে শৃঙ্খলে আটক করেছিলেন 1898 সালে।”
শিনওয়ারি বলেছিলেন যে গাছটি বর্তমানে যে জায়গাটিতে রয়েছে সেটি তার পৈতৃক সম্পত্তি ছিল। কিন্তু সেই সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জোর করে এই সম্পত্তি ছিনিয়ে নিয়েছিল।
আশ্চর্যের কথা হলো ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও, গাছের উপর কিন্তু একটি বোর্ড এখনও আছে, যেখানে লেখা আছে: “আমি গ্রেপ্তার হয়েছি।এক সন্ধ্যায় একজন ব্রিটিশ আধিকারিক ভারী মদ্যপান করে ভাবছিলেন যে আমি আমার আসল অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছি এবং মেস সার্জেন্টকে আমাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখন থেকে আমি গ্রেপ্তার আছি।”
সম্ভবত ব্রিটিশ সেনা অফিসার মদ্যপ অবস্থায় থাকার কারণে, বটগাছটি আসল অবস্থান থেকে সরে যেতে দেখেন এবং ভয় পেয়ে যান।তৎক্ষণাৎ তিনি আদেশ দেন বটগাছটিকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয়রা বলেছেন যে বন্দী গাছটি হ’ল ব্রিটিশ রাজ ফ্রন্টিয়ার ক্রাইমস রেগুলেশন (এফসিআর) আইনের প্রতীক।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ল্যান্ডি কোটাল সেনানিবাসের মাঠে বর্তমানে গাছটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন বহু পর্যটক, বিদেশি ও স্থানীয়দের।
ওই অঞ্চলের সাংবাদিক আবু জার খান আফ্রিদি বলেছিলেন, “গাছটি উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়নকে তুলে ধরেছে এবং কল্পনা করুন যে কোনও ব্রিটিশ অফিসার যদি শৃঙ্খলে একটি গাছ রাখতে পারেন তবে সেই যুগের স্থানীয়দের সাথে কেমন আচরণ করছিলেন?”
যাই হোক ব্রিটিশ সেনা অফিসারের এহেন শাস্তি ভোগ করে চলেছে 123 বছর ধরে সেই বটগাছটি,বহন করে চলেছে শৃঙ্খলের ভার, সম্ভবত যাতে পালিয়ে না যেতে পারে! শুধুমাত্র মদ্যপ অবস্থায় থাকা এক অফিসারের কারণে!
– সপ্তদীপা রায় কর্মকার
More Stories
অদৃশ্য ট্রেন – কখনো শুনেছেন কোনো ট্রেন অদৃশ্য হয়ে গেছে ! – Invisible Train