চার-পায়ে অতিথির যত্নআত্তি
আমার ছোট্ট কুকুর, পায়ের কাছে হূদয়ের স্পন্দন!’ এভাবেই নিজের পোষা কুকুরটির প্রতি ভালোবাসার কথা বলেছিলেন আমেরিকান ঔপন্যাসিক এডিথ হোয়ারটন।
সত্যিই তো! লেজ নাড়তে নাড়তে পোষা বন্ধুটি যখন পায়ের কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, কিছু না বলেই সে বুঝিয়ে দিতে পারে আপনার প্রতি তার ভালোবাসা। প্রভুভক্ত প্রাণীটি যে শুধু ভালোবাসতে জানে তা নয়, ভালোবাসা আদায় করার কৌশলটাও তার ভালো জানা। তাই তো চারপেয়ে বন্ধুটি হঠাৎ অসুখে পড়ে ‘কুই কুই’ ডাকলে কেমন মন খারাপ হয়ে যায় বাড়ির সদস্যদের!
যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কুকুর,বিড়াল বা কোনো পোষ্য পোষেন, তাদের মনস্তত্ত্ব তাঁরা চিকিৎসক-বৈদ্যের চেয়ে কম বোঝেন না। পোষা প্রাণীটির যত্ন-আত্তির নিয়ম তাঁরা ভালোই জানেন। সমস্যা হয় নতুন পোষ্যের মালিকদের।
কী খাওয়াবেন, কোথায় রাখবেন—এসব নিয়ে বাড়ির লোকদের একেকজনের একেক মত। যাকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা, তার মতামতটা জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়ারও উপায় নেই! পোষ্যের যত্ন-আত্তি সম্পর্কে পশুপাখিদের দাতব্য প্রতিষ্ঠান অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রুবাইয়া আহমেদ বলেন, ‘বিদেশি পোষ্যের যত্ন নেওয়া খুব সমস্যা। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারে না, মালিকদেরও খুব ভুগতে হয়। আমাদের তাই দেশি প্রজাতি পালনে উৎসাহি হওয়া উচিত।
জেনে নেওয়া যাক তাদের পালনের কিছু টুকিটাকি।
খাবার
পোষ্যের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের চিকিৎসক মোসাদ্দিকুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘নানা রকম খাবার দেওয়া যায়। আমরা সাধারণত পোষ্য কুকুরদের সকালে আর রাতে দুই বেলা রুটি-পাউরুটি খাওয়ানোর পরামর্শ দিই। এ ছাড়া দুপুরে মুরগি, বিভিন্ন রকম সবজি, চাল আর মসুর ডাল একসঙ্গে করে খিচুড়ি তৈরি করে দেওয়া যায়। রান্নার সময় হালকা লবণ আর হলুদ দিতে হবে। খিচুড়িতে গরুর মাংসও দেওয়া যায়। কিন্তু গরুর মাংস থেকে অনেক সময় অ্যালার্জি হয়, এ দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। যাঁদের সামর্থ্য আছে, বাজারে কুকুরদের ও বিড়ালের জন্য অনেক রকম বিদেশি খাবার পাওয়া যায়, সেগুলোও দিতে পারেন।’ খিচুড়িতে মিষ্টি কুমড়া, গাজর, বরবটিসহ যেকোনো সবজিই দেওয়া যাবে বলে তিনি জানান। এতে কুকুরের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি নিয়ন্ত্রিত হবে। এছাড়া বিড়ালের বিভিন্ন প্রজাতির জন্য অনেক প্রকার ক্যাটফুডও মেলে। আসলে আমরা সাধারণত সাধের পোষ্য হিসাবে মার্জার ও কুকুরই বেশি করে পছন্দ করি।
টিকা ও চিকিৎসা
জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া আবশ্যক। জলাতঙ্ক ছাড়া আরও সাতটি গুরুতর রোগবালাই কুকুরকে আক্রমণ করতে পারে। এ জন্য প্রতিবছর একটি করে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া যেকোনো রোগবালাই দেখা দিলে নিকটস্থ পশু চিকিৎসালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ায় আছে কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতাল। মোহাম্মদপুরের বছিলায় আছে অভয়ারণ্য। এ ছাড়া গুলশান ও উত্তরায় কিছু বেসরকারি ক্লিনিক রয়েছে। ক্লিনিকগুলোতেও টিকাদানের ব্যবস্থা আছে। এখন প্রায় অনেক জায়গাতেই এমন টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যান্য
রুবাইয়া আহমেদ জানান, প্রতিটি পোষ্যেরই বন্ধ্যাকরণ জরুরি। বন্ধ্যাকরণ না করলে পোষ্যরা মানসিকভাবে কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণে এটি খুবই জরুরি। বন্ধ্যাকরণে বিভিন্ন রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
নতুন বন্ধু বাড়িতে আনার পরপরই নির্দিষ্ট জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস তৈরি করাতে হবে। পোষ্যপ্রেমীরা মনে করেন, তাদের বেঁধে রাখা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। প্রয়োজনে পোষা প্রানীটিকে বারান্দায়, গ্যারেজে কিংবা অন্য কোনো ঘরে রাখা যায়।
– অরুনাভ মৈত্র
More Stories