রহস্যজনক ট্রেন এবং প্ল্যাটফর্মগুলি সম্পর্কে একাধিক গল্প আমাদের কানে আসে কিন্তু কখনো শুনেছেন কি প্যাসেঞ্জার সমেত কোন ট্রেন হঠাৎ ই অদৃশ্য হয়ে গেছে? হ্যাঁ এমনটাও সম্ভব। ইতালীর একটি ট্রেন হঠাৎই অদৃশ্য হয়ে গেছিল যাত্রী সমেত।
১৯১১ সালে, জ্যানেটি নামে ইটালিয়ান একটি সংস্থা যারা পেশাগত ভাবে ট্রেন তৈরি করতো, তারা মনস্থ করে এমন একটি নতুন ট্রেন লঞ্চ করবে যেটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সুযোগ দেবে যাত্রীদের।
নির্দিষ্ট দিনে ১০০ জন যাত্রী এবং ৬জন কর্মীদের নিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। ঠিক করা হয়েছিল ল্যাডেন ট্র্যাক দিয়ে lombardy পাহাড়ের মধ্য প্রবেশ করবে ট্রেনটি। কোম্পানিটির আসল উদ্দেশ্য ছিল সৌখিন যাত্রীদের খুশি করা।
কোম্পানি যাত্রীদের খাবার,পানীয় সমস্থ কিছুর আয়োজন করেছিল যাতে তাদের কোন অসুবিধা না হয় এবং প্রকৃতি কে উপভোগ করতে পারে সুন্দরভাবে।
একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছিল।যাত্রীরা পরম আনন্দে সমস্তটা উপভোগ করছিল। ধীরে ধীরে ট্রেনটি Lombardy tunnel (যেটির দূরত্ব ছিল অর্ধেক মাইল) এ প্রবেশ করতে থাকে। টানেল এর অপর পাশে স্টেশনে সকলে যখন ট্রেনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে তখন বোঝা যায় ট্রেনটি সুড়ঙ্গে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
জ্যানেটি কোম্পানির মালিকরা সকলে এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে যায়।তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা যে এরকম টা কেন হলো!
একদল অনুসন্ধানকারী বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে আসে।তারা হন্যে হয়ে ট্রেনটিকে খুঁজেও কিছু পায় না।রেলওয়ে ম্যানেজমেন্ট এবং কর্মীরা টানেল এর ভেতরে তল্লাশি চালিয়েও কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।
হঠাৎ করেই একটি গোটা ট্রেন টানেল থেকে হাওয়া হয়ে গেল!কিভাবে সম্ভব এটি?
আশেপাশের সমস্ত স্টেশনে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়, কেউ ট্রেনটির কোন খবর দিতে পারেনা।
এরপর দুজন যাত্রী কোম্পানির কর্তাদের জানান যে তারাও সেই ট্রেনে যাত্রা করছিল।প্যাসেঞ্জার লিস্ট থেকে এটির প্রমাণ ও পাওয়া যায়।তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ট্রেনটি যখন টানেল এ প্রবেশ করতে থাকে তখন একটি ধোঁয়াশার বলয় তারা দেখতে পায়।ট্রেনটি গতি কমিয়ে আনে, এবং ধোঁয়াশার বলয়ের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকে।তখন এই দুই যাত্রী ভয় পেয়ে, দিকবিদিক ঠাহর করতে না পেরে ট্রেন থেকে নেমে যায়। তাদের দুজনের মধ্যেই মানসিক রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে ওই ঘটনার পর থেকে।টানেল টিকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কতৃপক্ষ।
মধ্যযুগের কিছু তথ্যসূত্র থেকে প্রমাণিত হয় যে Modena অঞ্চলের কিছু সন্ন্যাসী সেই সময় একটি যাত্রীবাহী ট্রেনকে দেখেছেন, অথচ তখনও ট্রেন আবিষ্কারই হয়নি, তখন ঘোড়াই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত যোগাযোগের মাধ্যম ছিল।
এছাড়াও অন্যান্য দেশ যেমন জার্মানি, রোমানিয়া, ইতালিতে বিভিন্ন সময়ে এই জ্যানেটি ট্রেনটিকে দেখা গেছে।
অবাক করে দেওয়া এই ট্রেনের ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। কোন এক যাত্রীর আত্মীয় পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে একটি চমকে দেওয়া খবর সংগ্রহ করে। ১৮৪০ সালে একটি হসপিটাল এর রেকর্ড থেকে জানা যায় যে ১০৪জন ইটালিয়ান সেই হসপিটালে ভর্তি হয় মানসিক বিশৃঙ্খল অবস্থায়।
তাদের পোশাক আশাক অদ্ভুত ধরনের ছিল।তারা প্রত্যেকে বলেন যে ইতালীর রোমে জ্যানেটি ট্রেনে তারা যাত্রা করছিলেন। সেখানকার নার্স এবং ডাক্তার রা অবাক হয়ে যান প্রত্যেকের এরকম বয়ান শুনে।
কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত সিগারেট বক্সে ১৯০৭ সালের উৎপাদন সময়কাল উল্লেখ করা ছিল যা এখনও মেক্সিকোর মিউজিয়ামে রয়েছে। যাত্রীদের অদ্ভুত ব্যবহারের কারণে ডাক্তার এবং নার্সরা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের কথা বিশ্বাস করেননি।
ট্রেনটি সময় হারিয়ে ফেলেছিল বা টাইম ট্রাভেল করেছিল বলে অনেকেই মনে করেন।আবার কিছু সংখ্যক মানুষ এই ঘটনাকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।কিন্তু আদৌ কি ঘটেছিল ব কোনটা সত্যি টা নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে কোন সঠিক মতামত পাওয়া যায়নি। কি এই ট্রেনটি টাইম ট্রাভেল করছিল? এও কি সম্ভব?
More Stories
বটগাছের গ্রেপ্তারের ঘটনা